তরমুজে বিভিন্ন ভিটামিনসহ রয়েছে ফোলেট,নিয়াসিন, পাইরিডক্সিন ইত্যাদি। এছাড়াও এক কাপ তরমুজ থেকে মাত্র ৪৬ ক্যালোরি পাওয়া যায়। যদিও অন্যান্য অনেক ফলের মত এতে ফাইবারের পরিমান অতখানি নেই, কিন্তু এতে ক্যালোরির পরিমান খুবই কম যা শরীরে ফ্যাট জমতে দেয়না ও জলের পরিমান বাড়িয়ে দেয়।
তরমুজের বিচি খুবই বিরক্তিকর।তাও এর কিছু উপকারিতা রয়েছে।
এককাপ তরমুজের শুকনো দানায় রয়েছে ৬০০ ক্যালোরি । তরমুজের বিচিতে রয়েছে শর্করা, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড খাদ্যআশঁসহ গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনস্ ও মিনারেলস্ ইত্যাদি।
তরমুজের বিচির, বিশেষ করে ফোলেট, লৌহ,এবং খনিজ অংশ ইমিউন ফাংশন বাড়ায়। তরমুজের বিচির ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এই ব্যাপারে সাহায্য করে।পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
তরমুজের উপকারিতা
একটি তরমুজের বড় টুকরোয় মাত্র ৮৬ ক্যালোরি , ২২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ১ গ্রামের থেকেও কম ফ্যাট থাকে এবং কোনোরকম কোলেস্টেরল থাকে না।
তরমুজে থাকা লাইকোপেন ক্যান্সারের প্রবণতা অনেকটা কমিয়ে আনে । এই লাইকোপেনের জন্যেই তরমুজের রং গাঢ় লাল হয় এবং এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর যা ক্যান্সার রোধ করে। দু কাপ তরমুজে রয়েছে ২০গ্রাম লাইকোপেন যা নানা ধরণের ক্যান্সারের বিরুধ্যে লড়াই করতে সাহায্য করে । প্রস্ট্রেট ক্যান্সারের জন্যে লাইকোপেন কেমো থেরাপির মত কাজ করে যা সহজেই ক্যান্সারের কোষগুলি নষ্ট করে দেয় বলে জানা গেছে।
ব্যায়াম বা জিম করার পর মাংস পেশীতে যখন ব্যাথা করে তখন ইলেকট্রোলাইট ও অ্যামাইনো অ্যাসিড ভরপুর সিট্রোলিন ( l-Citrulline) আরামদায়ক একটি ঔষধির কাজ করে । তরমুজে রয়েছে এই সিট্রোলিন যা মাংস পেশির ক্লান্তি দূর করতে সক্ষম বলে জানা গেছে । তাই তরমুজ শরীরে জমে যাওয়া ল্যাকটিক অ্যাসিড দূর হয় ও মাংস পেশি সচল রাখতে সাহায্য করে।
তরমুজ ভিটামিন সি তে সমৃদ্ধ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে । এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি ৬ যা অ্যান্টিবডি গঠন করতে সাহায্য করে । এর ফলে শ্বেত রক্ত ক্ষণিকা সঠিক পরিমানে তৈরী হয়।
তরমুজে উপস্থিত লাইকোপেন নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ যা শরীরের নানা সমস্যা যেমন ঠান্ডা লাগা ও জ্বর প্রতিরোধ করে । এমনকি বয়স্কদের ক্ষেত্রেও তরমুজ হাঁপানির সমস্যা কম করতে সাহায্য করে থাকে।
কিডনির সমস্যা থাকলে কম পটাসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়াই উচিত এবং এক্ষেত্রে তরমুজ অনায়াসে আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।
তরমুজে রয়েছে উচ্চ পরিমানে সিট্রোলিন যা উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনতে দারুন কার্যকরী ।
তরমুজে ভিটামিন-এ থাকার কারণে অনেক দিন পর্যন্ত স্পষ্ট দৃষ্টি শক্তির অধিকারী হতে পারা যায় যদি নিয়মিত তরমুজ খাওয়া যায়।
শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে গরমে স্ট্রোক ( Heat stroke ) হওয়া রোধ করা সম্ভব হতে পারে ।
তরমুজ খাওয়ার ফলে অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের চিড় ধরা রোধ করা যায় । এছাড়া হাড়ের বৃদ্ধিতেও এর প্রভাব আছে বলে জানা যায় ।
তরমুজে থাকা ভিটামিন সি মাড়ির জন্যে খুবই ভালো । মুখের ভেতরের ব্যাকটিরিয়া ও মাড়ির সংক্রমণও রোধ করতে সাহায্য করে।
লাইকোপেনে সমৃদ্ধ তরমুজ শরীরের কোষগুলিকে হার্টের রোগ সংক্রান্ত ক্ষতির থেকে রক্ষা করে ।
গর্ভাবস্থার সময় বুকে জ্বালা ভাব হওয়া খুব সাধারণ। এছাড়া সকালে উঠে গর্ভবতী মহিলাদের অসুস্থ বোধ করতেও দেখা যায়। এই সবকিছু তরমুজ খেলে অনেকটা রোধ করা যায় ।
তরমুজে লাইকোপেন ছাড়াও রয়েছে আন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা শরীরের সংক্রমণ ও ফোলাভাব দূর করতে সাহায্য করে ।
তরমুজের অপকারিতা
কোনো জিনিসই অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে ক্ষতি হতে পারে, তরমুজের ক্ষেত্রেও তার ভিন্ন নয়।
তরমুজে রয়েছে ভরপুর মাত্রায় লাইকোপেন যা অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে পেটের নানারকমের সমস্যা দেখা দেয় যেমন বমি, পেট খারাপ, হজমের সমস্যা, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি।
হাইপারক্যালেমিয়া এমন একটি রোগ যেখানে শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক মাত্রায় পটাশিয়াম বেড়ে যায়, যা অতিরিক্ত পরিমান তরমুজ খেলে হতে পারে ।
যাদের তরমুজ খেলে অ্যালার্জি হয়, তাদের কোনোভাবেই তরমুজ খাওয়া উচিত না।
ত্বকের ক্ষেত্রে তরমুজের অবদান
বিশেষজ্ঞরা বলেন, তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ যা শরীরের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
তরমুজ ত্বকের রোদে-পোড়া ও কালচে দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
পাতলা টাওয়েল বা রুমাল তরমুজের রসে ভিজিয়ে মুখের উপর দিয়ে ১৫ মিঃ রেখে তারপর মুখ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
তরমুজের রসের সাথে শসার রস মিশিয়ে রোদে-পোড়া ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিঃ রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
আরও পড়ুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন