ছবি:ইন্টারনেট


অনেককে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় মানে বহু বছর থেকে হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন কিন্তু কখনই হার্ট অ্যাটাক হয়নি।

তবে এ কথা সত্য যে, হার্ট ব্লক ছাড়া খুব কমই হার্ট অ্যাটাক ঘটে থাকে অর্থাৎ যাদের হার্ট অ্যাটাক ঘটে থাকে তাদের প্রায় সবারই কোনো না কোনো পর্যায়ের হার্ট ব্লক থাকে, হতে পারে ব্লক প্রাথমিক পর্যায়ের বা জটিল পর্যায়ের।

এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায়, ২০০০ সালের শুরু থেকে প্রতিবছর ১৭ মিলিয়ন লোক মারা যায় এই হৃৎপি- ও রক্তনালি জনিত রোগের কারণে। দেখা যায়, হৃৎপি-ে রক্তনালির ও মস্তিষ্কের স্ট্র্রোক জনিত কারণে মৃত্যুর হার ক্যান্সার, এইচআইভি-এইডস্ এবং ম্যালেরিয়া থেকেও বেশি। বর্তমানে ৩১% মৃত্যুর কারণ ধরা হয় এই হৃদরোগ ও রক্তনালি জনিত রোগের কারণে এবং অল্প বয়সে মৃত্যুর ৮০% কারণও এ হৃদরোগকে দায়ী করা হয়।

কারো করোনারি আর্টারী বা হার্টের রক্তনালির ৭০ শতাংশ ব্লক হয়ে গেলে তখনই এনজাইনা হয়ে থাকে।আবার করোনারি ধমনি যখন ১০০ শতাংশ ব্লক হয়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়।

২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য হলো অসংক্রামক ব্যাধি জনিত মৃত্যুর হার হ্রাস করা এবং অল্প বয়সে হৃদরোগ জনিত কারণে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগে মৃত্যুর হার ১৫ লাখ, শ্বসনতন্ত্রের রোগজনিত মৃত্যুর হার ৪০ লাখ, ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার ৮২ লাখ।

অন্যদিকে, হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হার বছরে সর্বোচ্চ এক কোটি ৭০ লাখ। বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তার শতকরা ৩১ শতাংশ হৃদরোগের কারণে। বাংলাদেশেও হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

হৃদরোগে দেশে প্রতিবছর দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যান, যার ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। যেসব কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে তার মধ্যে ট্রান্সফ্যাট অন্যতম।

ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগে মৃত্যু সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বে ট্রান্সফ্যাটের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।

একটি ব্লক ১০% থেকে বৃদ্ধি পেতে পেতে ৮০%-এ পৌঁছাতে ব্যক্তিভেদে ১০ থেকে ৩০/৪০ বছর সময় লাগতে পারে। তাই বলা হয়ে থাকে, ব্যক্তি হার্ট ব্লক নিয়ে দীর্ঘসময় সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

হার্ট ব্লকের (%) পার্সেন্টেজ বৃদ্ধি পেলে ব্লকের ভাটির দিকের অংশে রক্ত সরবরাহ কমে যায়।
কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগ পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর একক কারণ হিসেবে শীর্ষে।

 ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও) যা বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত।

ধমনীতে ব্লকের মূল কারণ কোলেস্টেরল যা আমাদের প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে এবং রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে ধমনীর ভেতরের গায়ে জমা হয়ে ব্লকের সৃষ্টি করে। কোলেস্টেরলই ব্লকের একমাত্র কারণ নয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ধূমপানকেও বড় কারণগুলোর অন্যতম মনে করা হয়।


ব্লক থেকে হার্ট অ্যাটাক

ব্লক থাকলে নিয়মিত চিকিৎসা না নিলে তা হার্ট অ্যাটাকের দিকে মোড় নিতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের ফলে হৃৎপেশি মারা যেতে শুরু করে বলে বুকে তীব্র ব্যথার সঙ্গে বমি ও প্রচুর ঘাম হয়। হার্ট অ্যাটাক ইশ্কেমিক হার্ট ডিজিজের খুবই মারাত্মক এক পরিণতি যা প্রায়ই রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক

যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় বুকে তীব্র ব্যথা, ঘাম, বমি- এসব লক্ষণ ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। একে বলে ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’।

যেসব ব্যক্তি সব সময় গাড়িতে চলাফেরা করেন, লিফটে উপরে উঠেন, তারা এ পর্যায়ে একদম স্বাভাবিক থাকে মানে তাদের শরীরে হার্ট ব্লকের কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না।

 তবে যেসব ব্যক্তি কিছুটা কায়িকশ্রম সম্পাদন করে থাকেন তারা পরিশ্রমকালীন বুকব্যথা, বুকে চাপ অনুভব, বুক ধড়ফড় ও অত্যধিক পেরেশান হয়ে পড়েন। এসব উপসর্গকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এনজিনা বলা হয়।

এনজিনার ব্যথা হওয়ার প্রধান এবং একমাত্র কারণ কিন্তু হার্ট ব্লক। 

অনেকে এনজিনার ব্যথাকে গ্যাসের ব্যথা ভেবে গ্যাসের ওষুধ গ্রহণ করে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে এবং তা থেকে পরিত্রাণও পেয়ে থাকেন।

যদি কেউ এনজিনায় আক্রান্ত হতে থাকে তবে বুঝতে হবে, তার হার্টের রক্তনালিতে ব্লক দেখা দিয়েছে এটা নিশ্চিত। এছাড়া কয়টা ব্লক আছে, ব্লকগুলো কোথায় অবস্থিত এবং এর কোনটা কত পার্সেন্ট ব্লক তা বোঝার জন্য এনজিওগ্রাম টেস্ট অবশ্যই করতে হবে।

তবে বর্তমান সময়ে সিটি এনজিওগ্রামের মাধ্যমেও ব্লক নির্ণয় করা যায়। কেউ এনজিনায় আক্রান্ত হলে তার হার্টে ব্লক আছে এটা নিশ্চিত। তাই এ অবস্থায় একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বা কার্ডিওলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে।

হার্টে ব্লক হওয়া মানে মূলত হার্টের রক্তনালীগুলোর মধ্যে চর্বি জমে গিয়ে রক্ত প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ হওয়াকে বুঝায় l রিং পরানো মানে ঐ ব্লক হওয়া নালিকার মধ্যে দিয়ে রক্ত প্রবাহের একটা রাস্তা করে দেয়া।

এনজিওগ্রাম : এক্স-রে’র মাধ্যমে শরীরের মধ্যে ধমনীর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশ কে দেখা কে করোনারি এনজিওগ্রাম বলা হয়, এ ক্ষেত্রে ধমনীর মধ্যে একধরণের রঞ্জক পদাথ প্রবেশ করানো হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এনজিওগ্রাম করা হয়, যেমন

১। হার্টে করনারি এনজিওগ্রাম,

২। মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে সেরিব্রাল এনজিওগ্রাম,

৩। পায়ে পিএজি বা পেরিফেরাল এনজিওগ্রাম,

৪। কিডনিতে রেনাল এনজিওগ্রাম।
 
 করনারি এনজিওগ্রাম : করনারি আর্টারির মধ্যে কতগুলো ব্লক আছে বা ব্লকগুলোর অবস্থান কোথায় বা কত পার্সেন্ট ব্লক আছে।এজন্য পায়ের মোটা ধমনি বা হাতের ধমনিতে ক্যাথেটার (সরু প্লাস্টিক টিউব) ঢোকানো হই চামড়ার নিচে দিয়ে।

স্টেনটিং বা রিং পরানো : এনজিওপ্লাস্টির পর ওই জায়গার প্রশস্ততা ধরে রাখতে ওই স্থানে রিং বসানোকে স্টেনটিং বলে।

স্টেনটিং বা রিং পরানোর পরও ওই জায়গায় আবারও চর্বি জমতে পারে। তাই পরবর্তী সময়ে রক্তের চর্বি কমার ওষুধ, রক্ত জমাট না বাঁধার ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মতো খেয়ে যেতে হয়।

আরও  পড়ুন:









Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন