ছবি: ইন্টারনেট |
আমাদের মধ্যে অনেকেই নানারকম ডিজঅর্ডারে ভুগে।এই ডিজঅর্ডারেরে দরুণ তার মধ্যে কি পরিবর্তন আসছে সেটি সে লক্ষ না করলেও তার আশপাশের মানুষ থেকে এটি দৃষ্টিগোচর হয় না।এমনই একটি ডিজঅর্ডার হলো বাইপোলার ডিজঅর্ডার ।
বাইপোলার ডিজঅর্ডার,যা ম্যানিক ডিপ্রেশন নামেও পরিচিত হচ্ছে মূলত একটি মানসিক ব্যাধি যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণে দুটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
১.হাইপোম্যানিয়া ও
২.মেজর ডিপ্রেসিভ এপিসোড
এ দুই পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি বিপরীতধর্মী দুটি এক্সট্রিম মুড সুইং এর মধ্যে দিয়ে যায় যা তাদের ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। হাইপোম্যানিয়া পর্যায়ে ব্যক্তি অত্যাধিক আনন্দ ও ইতিবাচকতা দেখায়, অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহন করে যা ক্ষেত্রবিশেষে ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। হাইপোম্যানিয়া স্টেজের পরে আসে ডিপ্রেশন স্টেজ যেখানে ব্যক্তি মাত্রাধিক অবসাদে ভুগে, কোনকিছুতেই আর আগ্রহ খুঁজে পায়না এমনকি প্রাত্যাহিক কাজকর্মগুলোও করতে পারে না, এ সময় তাদের মধ্যে
আত্নহত্যাপ্রবণতাও দেখা যেতে পারে। এই দুই মেজাজের মধ্যেই একজন বাইপোলার ডিজঅর্ডার রোগীর স্বাভাবিক ব্যবহার করার অবস্থাও থাকতে পারে,যদিও এর নির্দিষ্ট কোন ধরণ নেই এবং প্রতিটি অবস্থা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্তও হতে পারে।
হাইপোম্যানিয়া : হাইপোম্যানিয়া স্টেজের গুরুতর অবস্থাকে বলা হয় ম্যানিয়া। ম্যানিক এপিসোডে ব্যক্তি অত্যন্ত অস্বাভাবিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় যা খুব সহজেই তার আশেপাশের মানুষের চোখে পড়বে। ম্যানিক এপিসোডে নিম্নোক্ত লক্ষনগুলো হাইপোম্যানিক এপিসোডের তুলনায় আরও অনেক প্রকটভাবে প্রকাশ পায় :-
১.ব্যক্তি অত্যন্ত আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠেন,মাত্রাতিরিক্ত ইউফোরিয়ায় ভুগেন।অথবা হঠাৎই তিরিক্ষি মেজাজ হয়ে যাওয়া,নিজের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
২.ঘুমানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না।
৩.কোনরকম চিন্তাভাবনা ছাড়াই সিন্ধান্ত গ্রহন করেন ; যেমন : ঝুকিপূর্ণ শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, মাদক গ্রহন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা,বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো ইত্যাদি।
৪.কাজকর্মে অত্যাধিক মনোযোগী হয়ে উঠা,তবে আচরনে অস্থিরতা,উশখুশ ভাব প্রকাশ পাওয়া,মস্তিষ্কে সর্বদা অনিয়ন্ত্রিত চিন্তা চলতে থাকা।
৫.অস্বাভাবিক রকম প্রাণশক্তিপূর্ণ,খুশি আচরণ করা বা অনুভব করা,নিজের সম্পর্কে অবাস্তব বা ভিত্তিহীন চিন্তা করা; নিজেকে সৃষ্টিকর্তা,ঐতিহাসিক চরিত্র বা তারকা ভাবা।
মেজর ডিপ্রেসিভ এপিসোড :
এই স্টেজে ব্যক্তি এমন অবসাদে নিমজ্জিত হন যে তার দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হয়।এসময় নিম্নোক্ত লক্ষনগুলো প্রকাশ পেতে পারে :
১.অবসাদগ্রস্ত মন,অল্পতেই কান্নায় ভেঙে পড়া,হতাশায় ভোগা।
২.ইনসোমনিয়াতে ভোগা বা অত্যাধিক ঘুমানো
৩.সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা,নিজের মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়া।
৪.খাওয়ার রুচি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া।
বাইপোলার ডিস্অর্ডার সাধারণত চার রকমের দেখা যায়।
১.বাইপোলার ডিস্অর্ডারঃ অন্ততপক্ষে ৭ দিন ধরে চলা ম্যানিয়া বা ২ সপ্তাহব্যাপী ডিপ্রেশনের জন্য রোগীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
২.বাইপোলার ২ ডিস্অর্ডারঃ এক্ষেত্রে ডিপ্রেসিভ ও হাইপোম্যানিক এপিসোডের মিশেল লক্ষ করা যায়।
৩.অনির্দিষ্ট বাইপোলার ডিস্অর্ডার বা বিপি-এনওএসঃ এক্ষেত্রে বাইপোলারের উপসর্গগুলিকে ওপরের নির্দিষ্ট দুটি ভাগে ভাগ করা যায় না।
৪.সাইক্লোথাইমিক ডিস্অর্ডার বা সাইক্লোথাইমিয়াঃ এক্ষেত্রে অন্তত দুই বছর রোগীর মধ্যে সামান্য ম্যানিয়া ও ডিপ্রেশন দেখতে পাওয়া যায়।
এই রোগের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই এই রোগের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। অসুখ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকার কারনে অনেকেই ডাক্তারের সরনাপন্ন হোন না বিধায় অসুখের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে।
অনুমান করা হয় যে পরিবারের কারও বাইপোলার রোগের ইতিহাস থাকলে জিনগত সমস্যার প্রভাবে এই রোগ হতে পারে, এছাড়াও হরমোনের ঘাটতি, চূড়ান্ত মানসিক আঘাত, মাদকাসক্তি ইত্যাদির কারনেও এই রোগ হতে পারে।
সঠিক চিকিৎসার সাহায্যে রোগীর পক্ষে স্বাভাবিক জীবন কাটানো সম্ভব। কগ্নিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি, কাউন্সেলিং ও ওষুধের সাহায্যে রোগের উপসর্গ ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। রোগীর সহ্যক্ষমতা, রোগের পর্যায়, পারিবারিক চিকিৎসা এমনকি বয়সের ওপর নির্ভর করে তিনি চিকিৎসায় কতটা সাড়া দেবেন।
আরও পড়ুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন