ছবি: ইন্টারনেট




এই জায়গাটা অপরিষ্কার কেন? কয়েকবার বলেছি জিনিসপত্র সব সুন্দর করে সাজানো থাকবে।গ্যাসের চুলা তো অফ করাই,,কয়বার দেখা লাগবে যে ঠিক আছে কি না!!!! এতো খিটখিটে মেজাজ কেন এসব ব্যাপারে!!! 

টাকা ঠিকভাবে গুছিয়ে দিতে হয়,নতুন নোট একসাথে আর পুরাতন নোট একসাথে।টাকা উল্টাভাবে না দিয়ে সোজা করে সুুন্দর করে দিতে হয়।

আমাদের মাঝে এমন অনেকেরই এক কাজ বারবার করার বাতিক রয়েছে।তারা জানে যে তাদের বাতিক আছে কিন্তু তারপরও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এসব থেকে।এক ধরনের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।সবার সামনে হাসির পাত্র হবে বলে অনেকে জানাতেও চায় না এসব সমস্যার কথা।এই সমস্যা থেকে বের হতে না পারলে অনেকে আত্নহত্যার পথও বেছে নেয়।এই রোগটি হলো "অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার (OCD)।এটি "নিউরোসিস" জাতীয় একটি মানসিক রোগ।এর দুইটি অংশ আছে। একটি হলো অবসেশন অপরটি কম্পালশন। কম্পালশন হল অবসেসিভ চিন্তাভাবনা দূর করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা।

কেন এমন হয়

OCD নিয়ে অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা আছে। বেশিরভাগ মানুষ মনে করে যে আক্রান্ত ব্যক্তি আসলে পরিচ্ছন্নতার প্রতি অতিরিক্ত অনুরাগী। ব্যাপারটা তা নয়। সাধারণত কোনো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক আমাদের সংকেত দিতে থাকে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে। মস্তিষ্কের অঙ্গপরিচালনাকারী অংশটি নির্দিষ্ট অঙ্গ নাড়িয়ে সেই সংকেতকে কাজে রুপান্তরিত করে।

মানব মস্তিষ্কের গঠন বড়ই জটিল। এতে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন স্নায়ুকোষ বা নিউরন। দেহের কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্যে এসব নিউরনের মিলিতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করা অতি জরুরী। নিউরোট্রান্সমিটার নামক রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য এক নিউরন থেকে আরেক নিউরনে প্রবাহিত হওয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে। এক সময় মনে করা হতো সেরাটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার এর স্তর কমে যাবার কারণে "অবসেসিভ কম্পালশন ডিজঅর্ডার" উদ্ভুত হয়। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মস্তিষ্কের যে অংশটি বিচার-বিবেচনা ও বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ করে এবং যে অংশটি শরীরের বিভিন্ন অংশ নড়াচড়া করার নির্দেশ প্রদান করে, তাদের মধ্যে যোগাযোগের সমস্যার কারণে এটি সৃষ্টি হয়।

নিমহানস্‌-এর অধীনস্থ, ভারতের প্রথম ওসিডি ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ওয়াইসি জনার্দন রেড্ডির মতে, একজন ব্যক্তি, যিনি সম্পূর্ণ ওসিডি-তে  আক্রান্ত এবং যার মধ্যে ওসিডি-র সামান্য লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে, এমন দু'টি ক্ষেত্রে খুব সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।ওসিডি স্কিৎজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারের থেকেও অনেক প্রচলিত একটি অসুখ এবং মোট জনসংখ্যার ১-৩ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত হয়। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই ওসিডি-র সমস্যা খুব ছোট আকারে দেখা দেয় এবং বেশিরভাগ সময়েই তা সঠিকভাবে চিহ্নিত হয় না। এদের মধ্যে ১ শতাংশের ক্ষেত্রে সমস্যা অত্যন্ত গুরুতর হয়ে ওঠে এবং এক সময় তা সহ্যের বাইরে চলে যায়। আবার প্রচলিত বিশ্বাস এবং ডা. রেড্ডির মত অনুযায়ী, শিশুদের মধ্যেও ওসিডি-র সমস্যা হতে পারে এবং তার প্রভাব তার যৌবনকাল পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে। শিশুদের ওসিডি নিয়ে নিমহানস্‌-এর বিশেষজ্ঞ ডা. জয়সূর্য টিএসটু একটি সমীক্ষা করেছিলেন। সেখানে দেখা গিয়েছিল যে, ১০০ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের মধ্যে ওসিডি-র লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক ভয়াবহ হয় কারণ, তারা বুঝতেই পারে না যে তাদের কী হয়েছে। তাদের মাথায় সব অবাস্তব চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খায়। আর সেগুলি তারা অন্য কাউকে বলতেও পারে না। কিন্তু আশার কথা এই যে, চিকিৎসার সাহায্যে ওসিডি সেরে যায়। ডা. রেড্ডির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিমহানস্‌-এ চিকিৎসারত প্রায় ৭০ শতাংশ ওসিডি রুগির অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেকোনো কাজ ৩, ৬ বা ৯ সংখ্যক বার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত ৩৫ বছরের বেশি ও ২০ বছরের কম বয়সী মানুষদের মাঝে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে জীবনের যেকোনো সময়ই একজন শুচিবাইগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন।বিভিন্ন ধরণের আতঙ্ক এই রোগীদের গ্রাস করে। এক একটি বিশেষ বস্তু বা অবস্থাকে কেন্দ্র করে তাঁর মনে মারাত্মক ভয় ও আতঙ্কগ্রস্ত ভাব দেখা যায়। অনেকের মধ্যে ক্ল্যসট্রোফোবিয়া বা বদ্ধ জায়গার ভয় প্রচণ্ড পরিমাণে থাকে। যার ফলে রোগী ভীড় ট্রেনে-বাসে উঠতে ভয় পায়। এছাড়া, ফাঁকা জায়গায় একা যেতে ভয় (অ্যাগোরাফোবিয়া), অন্ধকারের ভয় (নিক্কোফোবিয়া), কঠিন রোগ-ব্যাধির ভয় (প্যাথোফোবিয়া), একাকীত্বের ভয় (মোনোফোবিয়া), রক্ত দেখলে ভয় (হেমাটোফোবিয়া), ঊচ্চস্থানের ভয় (অ্যাক্রোফোবিয়া) ইত্যাদি বহুবিধ আতঙ্ক OCD রোগীদের মধ্যে বর্তমান থাকে। 


যেসব খাবার পরিহার করা উচিত

১। সুগারি ফুড ওসিডি রোগীদের জন্যে ক্ষতিকর। সুগারি ড্রিঙ্ক, সোডা, ক্যান্ডি, অন্যান্য মিষ্টি এই রোগীদের খাওয়া বারণ। এতে উৎকণ্ঠা আর প্যানিক অ্যাটাক বাড়তে পারে।

২। এই রোগীদের কফি অ্যালকোহল খাওয়া একদম নিষেধ। দু’-এক কাপ চা চলতে পারে।

৩। সব ধরনের ফল ওসিডি রোগীদের জন্যে ভালো।

৪। ওসিডি যেহেতু সবচেয়ে কঠিন ধরনের অ্যাংজাইটি নিউরোসিস, এই রোগীদের খাদ্যতালিকায় প্রসেসড মীট ও ফিশ আর মিষ্টিযুক্ত ডেজার্ট  রাখবেন না। এতে অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বাড়তে পারে। অন্যান্য প্রসেসড ফুডও এদের খাদ্য তালিকা থেকে বর্জন করতে পারেন।

ঔষধ

১. TCA-Clomipramive (SSRI) Fluoxetine, Sertalline, Flvuoxamine উচ্চ ডোজে দেয়া হয়। TCA, SSRI. বা বিষণ্ণতা নাশক ওষুধ আস্তে আস্তে উচ্চমাত্রায় না দিলে Obession কমবে না।

২. Benzodiayepine স্বল্পকালীন সময় দেয়া যেতে পারে যা ৩ সপ্তাহের বেশি নয়। এটা মনের অস্থিরতা কমাবে।

৩. অন্যান্য চিকিৎসা DBS (Deep Brain Stimulation) Psychosurgery - Candate nucleus কেটে ফেলা।

৪. ECT (Electro Convulsive Therapy) বৈদ্যুতিক চিকিৎসা। এটা সাধারণত Resistant OCD তে দেয়া যায়।

এই রোগের চিকিৎসা কিংবা ব্যবস্থাপনার জন্য সহায়ক হতে পারে এমন কিছু বিকল্প ওষুধ এবং থেরাপি নিম্নরূপ:

ধ্যান করুন: চাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে।

ম্যাসেজ থেরাপি পান: শরীরকে প্রশ্রয় দেয় এবং চাপ কমাতে সহায়তা করে।

যোগ করুন: চাপ এবং উদ্বেগ সহজে সাহায্য করে।

গভীর শ্বাস অনুশীলন: চাপ এবং উদ্বেগ সহজে সাহায্য করে।

তাই চি থেরাপি পান: চাপ এবং উদ্বেগ সহজে সাহায্য করে।

এসব সমস্যা অনেকসময় মেডিকেল টেস্টগুলোতে নাও পাওয়া যেতে পারে।তবে এসব সমস্যার ১/২ টা থাকা মানে এই না যে আমি বা আপনি OCD রোগে আক্রান্ত। তারপরও এ ব্যাপারে সন্দিহান হলে অবশ্যই একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।


আরও পড়ুন 

মাসিক কি অসুস্থতা

বদ্ধ স্থানে দম বন্ধ কেনো মনে হয়( ক্লাস্ট্রোফোবিয়া)

ধনে পাতার ব্যবহার

1 মন্তব্যসমূহ

  1. OCD তো গেলো চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা। বাংলায় বললে সূচি বায়ু রোগ। এর ইসলামিক টার্ম হলো ওয়াসওয়াসা। এর সমাধান ও আছে। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন:
    https://ruqyahbd.org/blog/category/waswas

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন