নিয়ম মেনে অর্থাৎ আধা লিটার বিশুদ্ধ পানিতে এক প্যাকেটের পুরোটা গুলিয়ে নিতে হবে। খেতে হবে বয়সভেদে নিয়ম করে। আবার একবার গুলিয়ে নিলে ছয় ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না খাবার স্যালাইন। নয়তো হতে পারে হিতে বিপরীত।




একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের জন্য দৈনিক খাবারে লবণ গ্রহণের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যকর মাত্রা হলো ৬ গ্রাম (২.৪ গ্রাম সোডিয়াম) বা আধা চামচের কম। এক প্যাকেট ওরস্যালাইনে থাকে ১.৩ গ্রাম সোডিয়াম। কেউ দুই দিনে ১০ প্যাকেট অর্থাৎ দিনে ৬.৫ গ্রাম সোডিয়াম খেলে দৈনিক সর্বোচ্চ মাত্রার প্রায় ৩ গুণ বেশি হবে। এর বাইরে আমরা যে নিয়মিত খাবার খাই, তাতে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে।এর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করতে পারে পটাশিয়াম। মানবদেহে দৈনিক পটাশিয়াম গ্রহণের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যকর মাত্রা ৩.৫ গ্রাম। এক প্যাকেট খাবার স্যালাইনে থাকে ০.৭৫ গ্রাম। অর্থাৎ ৪-৫ প্যাকেট স্যালাইন খেলেই সর্বোচ্চ মাত্রা অতিক্রম করবে। ডাবের পানিতে এর চেয়ে বেশি পটাশিয়াম থাকে। আধা লিটার ডাবের পানিতে প্রায় ০.৯ গ্রাম পটাশিয়াম থাকে। কেউ প্রয়োজনের বেশি পটাশিয়াম গ্রহণ করলে হাইপারক্যালেমিয়া তৈরি হতে পারে। যার ফলাফল কিডনি ফেইলিওর, হার্ট অ্যাটাক ও মৃত্যু। স্যালাইন খেতে হবে কতবার, তা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, ওজন, ডায়রিয়ার তীব্রতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর। 

 বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ডা. প্রবির কুমার সাহা বলেন, যত অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ আছে, প্রতিটি ওষুধের প্যাকেটের ভেতর ব্যবহারবিধি দেয়া আছে। ওই ওষুধ খেলে কী ফলাফল হবে, ডোজ ঠিক না হলে কী ক্ষতি হতে পারে, তার বিস্তারিত তথ্য দেয়া আছে। সে ক্ষেত্রে জেনে-বুঝে স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে।

যখন আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ফ্লুইড (ইলেকট্রোলাইটস ও গ্লুকোজ) বের হয়ে যায় সেটা যেকোনো কারণশতঃ যেমন ডায়ারিয়া , অধিক পরিশ্রম ,বমি হওয়া ,অ্যাকসিডেন্ট লস ইত্যাদি যার ফলে শরীর দুর্বল অনুভব করি তখন আমরা বলি ডি হাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা। আর ডিহাইড্রেশন কে রিহাইড্রেশন করতে আমরা খাবার স্যালাইন খেয়ে থাকি।প্রতিদিন খাওয়া ঠিক হবে না খাবার স্যালাইন এ সোডিয়াম ক্লোরাইড অর্থাৎ লবণ থাকে। এছাড়া ইলেকট্রোলাইটস এর ব্যালেন্স এর একটা ব্যাপার আছে বেশি কম হলেই শরীরের জন্য পরিবর্তন নিয়ে আসে। তবে মনে রাখবেন বেশি লবণ কিডনি এবং হার্টের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া বেশি পরিমাণ গ্লুকোজ পাকস্থলী জন্য ক্ষতিকর। স্যালাইন দিচ্ছি কিন্তু পায়খানা তো ঠিক হচ্ছে না!! স্যালাইনের কাজ পায়খানা ঠিক করা না, শরীরের লবণ পানির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। 

অতিরিক্ত স্যালাইন পান করলে শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে কোষের ভেতর পাণিশূন্যতা তৈরি হয়। এর ফলে কোষের ভেতর ফ্লুইডের ঘনত্ব বেড়ে যায়। যার ফলে রক্তপাত হয়ে যায়।স্যালাইনের উপাদানে সোডিয়াম ক্লোরাইড উপস্থিত থাকার কারণে রক্তে ইলেকটোলাইট ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে শ্বাসকষ্ট হলেও তা অস্বাভাবিক হবে না। অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়ার ফলে রক্তে লবণের পরিমাণ বেড়ে হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। তুচ্ছ কারণে স্যালাইন খাওয়া স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।নিয়ম মেনে অর্থাৎ আধা লিটার বিশুদ্ধ পানিতে এক প্যাকেটের পুরোটা গুলিয়ে নিতে হবে। খেতে হবে বয়সভেদে নিয়ম করে। আবার একবার গুলিয়ে নিলে ছয় ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না খাবার স্যালাইন। নয়তো হতে পারে হিতে বিপরীত।

এমন কিছু স্যালাইন আছে যা খেলে শরীরের চর্বি কমতে পারে। এই স্যালাইনগুলিতে সাধারণত ক্যাফিন, গ্লুটামিন এবং এল-কার্নিটিন থাকে। ক্যাফিন একটি উত্তেজক পদার্থ যা মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। গ্লুটামিন একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা পেশী তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে।এর বাইরেও স্যালাইন, ডাবের পানি, এনার্জি ড্রিংক, সফট ড্রিংক, লবণ মাখানো ফলসহ আরও নানাবিধ উপায়ে কত পরিমাণ লবণ যে আমরা খাচ্ছি। কারণে-অকারণে স্যালাইন বা অন্য উপায়ে অতিরিক্ত লবণ খেলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে শরীরে। ভাত-তরকারির সঙ্গে থাকা লবণ হঠাৎ করে কমিয়ে ফেলা অনেকের ক্ষেত্রেই সম্ভব নয় কিন্তু অন্যান্য উৎস যেমন বিভিন্ন কোমল পানীয়, নাস্তা, চিপস, লবণ মাখানো ফল, সস, ভাজাপোড়া, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি উৎস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

আরও পড়ুন

হরমোন ভারসাম্যহীনতা দূরীকরণ


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন