হরমোনের ভারসাম্যেহীনতা দূর করতে প্রয়োজনীয় বীজচক্র বা সীড সাইক্লিং
হরমোনের সমস্যা বর্তমানে অধিকাংশ নারীর মাঝে একটা জটিল সমস্যা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
মহিলাদের হরমোনগুলো তাদের ব্যায়াম, ঘুম, স্ট্রেস লেভেল এবং পরিবেশগত টক্সিন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। শরীরের যেকোনো সামান্য হরমোনের সুষম নিয়ন্ত্রণ এর অভাবে বা ভারসাম্যহীনতার কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড, ব্রণ, PCOS, থাইরয়েড রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি সহ বেশ কয়েকটি সমস্যা দেখা দেয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে গর্ভধারণেরও জটিলতা সৃষ্টি করে।
সীড সাইকেলিং হরমোনগুলিকে মৃদু, কিন্তু কার্যকর উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করে। চলুন জেনে নিয় বীজচক্র বা সীড সাইক্লিং কি?
বীজচক্র বা সীড সাইক্লিং:
বীজ সাইকেল চালানো হল মাসিক চক্রের দুটি প্রধান পর্যায়ে (ফলিকুলার -Follicular phase ও লিউটাল-Luteal Phase) নির্দিষ্ট বীজ খাওয়ার অভ্যাস যা মাসিকের সাথে জড়িত বিভিন্ন হরমোনের মাত্রার সুস্থ ভারসাম্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।এটি হোমিওপ্যাথি ও এলোপ্যাথির মত একটি ন্যাচারালপ্যাথি। যা বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় ও কার্যকরী পন্থা। সীড সাইকেলিং বা বীজচক্র একজন মহিলার জীবনের যেকোনো পর্যায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে (মেনোপজ-পরবর্তী সহ)।
মেয়েদের মাসিক চক্র বিভিন্ন হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুইটি হল ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন। এই ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে বীজচক্র বা সীড সাইকেলিং। মাসিক চক্রের দুটি প্রধান পর্যায় আছে।
প্রথম পর্যায়: ফলিকুলার ফেজ
দ্বিতীয় পর্যায়: লিউটাল ফেজ
ফলিকুলার ফেজ: মাসিকের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়। এটি সাধারণত প্রায় ১৪ তম দিন স্থায়ী হয়।
লিউটাল ফেজ: পরবর্তী ১৫ তম দিন থেকে পরবর্তী মাসিকের রক্তপাত পর্যন্ত। এই সময় ডিম্বস্ফোটনের সময়। লিউটাল ফেজের দৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হতে পারে তবে এটি সাধারণত ১৪ দিনের কাছাকাছি হয়।
সাধারণত মাসিকের চক্রকে আমরা ২৮ দিন ধরে নিয়। অনেকের মাসিক চক্র ৩০,৩৫ বা ৪০ দিনেরও হয়। সেক্ষেত্রে মোট দিনকে দুইভাগে ভাগ করতে হবে।
যখন হরমোনের মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ হয়, তখন চক্রের প্রথমার্ধে ইস্ট্রোজেন বেড়ে যায়। চক্রের দ্বিতীয়ার্ধে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। তবে যখন এই হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে না তখন শরীরে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয় যেমন মুড সুইং, চুল পড়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, ফাইব্রোয়েডস, ওভারিয়ান সিস্ট, পেট ব্যাথা এবং পিএমএস। এ সমস্যার কারনে অনেকের গর্ভধারণেও সমস্যা হয়ে থাকে।
চলুন জেনে নিয় বীজ গুলো কি কি ও এর পুষ্টি উপাদান:
ফ্ল্যাক্স সিড: ওমেগা ৩, ফ্যাটি এসিড এবং লিগনান্স যা শরিরকে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন তৈরিতে বাধা দেয়।
পাম্পকিন সিড: ওমেগা ৬, ফ্যাটি এসিড এবং জিংক যা ইমিউন সিস্টেম বাড়ানোর পাশাপাশি হরমোন রিপ্রোডাকশন কে নিয়ন্ত্রণ করে।
সিসেম সিড: ওমেগা ৬, ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ই যা ফার্টিলিটির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সানফ্লাওয়ার সিড: ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এবং লিগনান্স যা এন্টি ইস্ট্রোজেনিক হিসেবে কাজ করে।
হরমোন ভারসাম্যের জন্য কীভাবে বীজচক্র বা সীড সাইকেলিং শুরু করবেন?
বীজ সাইকেল চালানো বেশ সহজ।
মাসিক চক্রের 1-14 দিন (বা ঋতুস্রাব থেকে ডিম্বস্রাব)
1-2 টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স বীজ
1-2 টেবিল চামচ কুমড়ার বীজ
মাসিক চক্রের 15-28 দিন (বা ঋতুস্রাব থেকে ডিম্বস্ফোটন)
1-2 টেবিল চামচ সূর্যমুখী বীজ
1-2 টেবিল চামচ তিল বীজ
আপনার দৈনন্দিন রুটিনে বীজ গুলো কিভাবে খাবেন:
প্রতিদিন 1-2 টেবিল চামচ নির্দিষ্ট বীজ খাদ্য তালিকার যেকোনো খাবারের সাথে যুক্ত করে খাওয়া যায়।তাছাড়া শুধু বীজ গুলোকেও খাওয়া যায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে বীজগুলো যেন টাটকা ও কাঁচা হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহার এর জন্য রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যায়।
ফলাফল:
বীজ সাইকেল চালানোর পর তা শরীরের সাথে কাজ করতে সময় নেয়। উপকারগুলি লক্ষ্য করা শুরু করতে দৈনিক ব্যবহারের কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। আর আপনি যদি ভাগ্যবান হোন তাহলে এই ৩ মাসের মধ্যেই ফলাফল পেতে পারেন।
Rifat Ara Chowdhury
আরও পড়ুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন